👉 আইফোন এয়ার দেখতে আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবে এতে রয়েছে ব্যাটারি দুর্বলতা, টেকসইতার অভাব এবং অতিরিক্ত দাম।

আইফোন এয়ার রিভিউ ২০২৫ – কেন কিনবেন না? ব্যাটারি, টেকসইতা ও দামের সমস্যা বিশ্লেষণ

স্মার্টফোন জগতে অ্যাপলের নামই আলাদা। নতুন কোনো মডেল বাজারে এলেই আলোচনার ঝড় ওঠে। সম্প্রতি "আইফোন এয়ার" নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনে এর স্লিম ডিজাইন, হালকা ওজন এবং স্টাইলিশ লুককে তুলে ধরা হচ্ছে মূল আকর্ষণ হিসেবে। কিন্তু বাস্তবে এই ফোনটি কি সত্যিই ব্যবহারকারীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে? নাকি শুধুই মার্কেটিং এর ফাঁদ?

অনেকে শুধুমাত্র ব্র্যান্ডের নামে ফোন কিনে ফেলেন, অথচ এর ভেতরের সীমাবদ্ধতাগুলো খেয়াল করেন না। ডিজাইন ভালো হলেও, বাস্তব ব্যবহার, ব্যাটারি ব্যাকআপ, পারফরম্যান্স, এবং টেকসইতা — সবদিক থেকেই বেশ কিছু বড় সীমাবদ্ধতা আছে। তাই এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব, কেন আইফোন এয়ার হয়তো আপনার জন্য সঠিক ফোন নয়।

অ্যাপল সবসময়ই ডিজাইনে নতুনত্ব আনে, আর আইফোন এয়ারও এর ব্যতিক্রম নয়। এটি বাজারে এসেছে অতিরিক্ত পাতলা এবং হালকা বডি নিয়ে। প্রথম দেখায় ফোনটি নিঃসন্দেহে প্রিমিয়াম মনে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে — পাতলা আর হালকা মানেই কি ভালো স্মার্টফোন?

যখন ফোনকে অতিরিক্ত স্লিম করা হয়, তখন ব্যাটারি এবং টেকসইতাতে ছাড় দিতে হয়। অনেক ব্যবহারকারী ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন যে, আইফোন এয়ার খুব সহজেই বাঁকতে পারে বা পড়ে গেলে ভেঙে যেতে পারে। ফোনের ওজন কমাতে গিয়ে টেকসই অ্যালুমিনিয়াম বডির বদলে হালকা উপাদান ব্যবহার করায় এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একটা ফোন শুধু স্টাইলিশ হলেই হয় না, বরং ব্যবহারযোগ্য হতে হবে। প্রতিদিনের কাজে ব্যবহার করার মতো শক্তপোক্ত গঠন প্রয়োজন। কিন্তু আইফোন এয়ার সেই জায়গায় বড় ধরনের কমতি রেখেছে। তাই বলা যায়, ডিজাইনের চাকচিক্যের আড়ালে এর টেকসইতার অভাব লুকানো আছে।

আইফোন এয়ার এর সবচেয়ে বড় সমস্যার একটি হলো ব্যাটারি। ফোনকে অতিরিক্ত পাতলা করার কারণে এর ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ফোনটি দিনে একাধিকবার চার্জ দিতে হয়। যারা নিয়মিত বাইরে থাকেন বা কাজের প্রয়োজনে দীর্ঘসময় ফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি মারাত্মক অসুবিধা হয়ে দাঁড়ায়।

এখনকার দিনে ফোন শুধু কল করা বা মেসেজ পাঠানোর জন্য নয়। আমরা ভিডিও দেখি, গেম খেলি, অফিসের কাজ করি, এমনকি ব্যবসাও চালাই। এসবের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যাটারি অপরিহার্য। কিন্তু আইফোন এয়ার এই জায়গায় ব্যর্থ।

ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, সামান্য হেভি ইউজেই ফোনটি দ্রুত গরম হয়ে যায় এবং চার্জ শেষ হয়ে যায়। বিশেষ করে ভ্রমণ বা বাইরে থাকার সময় এ ফোনের ওপর ভরসা করা যায় না। তাই যারা দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ চান, তাদের জন্য এটি সঠিক পছন্দ নয়।

অ্যাপলের পণ্যের দাম সবসময়ই তুলনামূলক বেশি থাকে, কিন্তু সাধারণত সেই দামের সঙ্গে মানও পাওয়া যায়। কিন্তু আইফোন এয়ারের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।

একই দামে বাজারে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন আছে যেগুলোতে বড় ব্যাটারি, শক্তিশালী প্রসেসর, উন্নত ক্যামেরা এবং দ্রুত চার্জিং সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু আইফোন এয়ার শুধুমাত্র ডিজাইনের জন্য এত দাম নিচ্ছে।

স্মার্টফোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর হার্ডওয়্যার। কিন্তু আইফোন এয়ার এ সেই জায়গাতেও কিছু বড় সীমাবদ্ধতা আছে। ক্যামেরার ক্ষেত্রে এটি ভালো হলেও, একই দামে পাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বী ফোনগুলোর মতো উন্নত নয়। রাতের ছবি তুলতে সমস্যা হয়, ভিডিও রেকর্ডিং এ স্থিরতা কম থাকে।

এছাড়া এর প্রসেসরও তুলনামূলকভাবে দুর্বল। হাই-এন্ড গেমিং বা হেভি টাস্ক চালাতে গেলে ফোনটি দ্রুত গরম হয়ে যায় এবং ল্যাগ করে। যারা কাজ বা গেমিংয়ের জন্য শক্তিশালী ফোন চান, তাদের জন্য এটি হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হতে পারে।

অন্যদিকে, বাজারে থাকা অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপ ফোন একই দামে এর চেয়ে অনেক বেশি পারফরম্যান্স দিচ্ছে। তাই এখানে বোঝা যায়, আইফোন এয়ারের হার্ডওয়্যার ব্যবহারকারীর প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ।

অন্যদিকে, একই দামের অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে 120Hz বা 144Hz রিফ্রেশ রেট, HDR10+ সাপোর্ট এবং সুপার AMOLED ডিসপ্লে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে আইফোন এয়ারের সাধারণ মানের স্ক্রিন সত্যিই হতাশাজনক।

বিকল্প ডিভাইসের পরামর্শ

যদি আপনি সত্যিই একটি শক্তিশালী ফোন খুঁজছেন, তবে আইফোন এয়ারের দিকে তাকানোর দরকার নেই। বাজারে অনেক ভালো বিকল্প আছে।

• অ্যান্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপ ফোন – যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি S সিরিজ, গুগল পিক্সেল বা ওয়ানপ্লাস ফোনগুলো অনেক ভালো অপশন। এদের মধ্যে বড় ব্যাটারি, উন্নত ক্যামেরা, উচ্চ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে এবং দ্রুত চার্জিং সুবিধা থাকে।
• অ্যাপলের পুরোনো মডেল – যদি আপনি অ্যাপল ইকোসিস্টেমেই থাকতে চান, তবে আইফোন ১৩ বা আইফোন ১৪ কিনতে পারেন। এগুলো আইফোন এয়ারের চেয়ে সাশ্রয়ী এবং টেকসই।
• মিড-রেঞ্জ অ্যান্ড্রয়েড ফোন – যারা বাজেট ফ্রেন্ডলি ফোন খুঁজছেন, তাদের জন্যও মিড-রেঞ্জ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলো দারুণ। এগুলো কম দামে ভালো ব্যাটারি এবং ফিচার অফার করে।

তাই, যদি আপনি একটি ভালো ফোন কিনতে চান, তবে আইফোন এয়ারের দিকে না গিয়ে বিকল্পগুলো ভেবে দেখাই ভালো। এক কথায় বলা যায় — আইফোন এয়ারের চাকচিক্যের পেছনে অর্থ নষ্ট করার কোনো মানে নেই।